প্রকাশিত: ১৫/০৭/২০২২ ১০:৩৭ এএম
সেন্টমার্টিন জেডিঘাট/ ছবি – ওবাইদুল হক চৌধুরী
সেন্টমার্টিন জেডিঘাট/ ছবি – ওবাইদুল হক চৌধুরী

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। দ্বীপ বাঁচাতে, প্রাণীদের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ধাপে ধাপে পর্যটকের সংখ্যা কমানো হবে। দ্বীপ এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাগরে চলাচলের সময় কোনো জাহাজ বর্জ্য নিঃসরণ করলে তার রুট পারমিট বাতিল করা হবে।

আর সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাখি, মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও বিরল জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং টেকসই পর্যটন উন্নয়ন’ সংক্রান্ত সভায় একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় এ জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও অংশীজনের কাছে পাঠিয়েছে। এই খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোনো স্থায়ী অধিবাসী, অনিবাসী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে চাইলে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিতে হবে।

ধাপে ধাপে কমবে পর্যটকের সংখ্যা, নিষিদ্ধ ঘোষিত যান চলবে না, বর্জ্য নিঃসরণ করলে জাহাজের রুট পারমিট বাতিল, পাখি মাছ কচ্ছপ কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় গণবিজ্ঞপ্তি

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট দফতর সমন্বয় করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করবে। দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা বহন ক্ষমতা বিবেচনায় দৈনিক সর্বোচ্চ ৯০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। যদি কোনো জাহাজ এ সংখ্যার বেশি পর্যটক বহন করে তাহলে জাহাজের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। মৎস্য শিকারের জন্য নির্ধারিত নৌযানে কোনো অবস্থাতেই পর্যটক পরিবহন করা যাবে না।
এ বিধান লঙ্ঘন করলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে মৎস্য শিকার বা ব্যবসার অনুমতি বাতিল করতে হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, দ্বীপের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য অনুসরণীয় এবং বর্জনীয় তালিকা সংবলিত নোটিস তৈরি দৃশ্যমান জায়গায় স্থাপন করবে। পরিবেশ অধিদফতর দ্বীপ এলাকা ও বন অধিদফতর মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়ার মধ্যে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য অনুমোদিত স্থানের সীমানা নির্ধারণ করবে। ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক ও পর্যটকবাহী সব প্রকার সড়ক ও নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিবেশ অধিদফতর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ এ বিষয়টি তদারক করবে।
পাখি, মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রে যাত্রীদের জীবনের সুরক্ষা বিবেচনায় দ্বীপে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে। অনিবন্ধিত ও রুট পারমিটবিহীন কোনো নৌযান বা দেশীয় নৌকা বা স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা জেটিতে নোঙর করতে পারবে না। সেন্টমার্টিন দ্বীপে ও সমুদ্রে বর্জ্য নিঃসরণ করা যাবে না। এ বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতে পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলাচলকারী কোনো নৌযান বা জাহাজ দ্বীপে ও সমুদ্রে বর্জ্য নিঃসরণ করলে তার রুট পারমিট বাতিলসহ জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং বিচ এলাকায় চলাচলকারী সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে দ্বীপে কোনো প্রকার আলো ও আগুন জালানো, ফানুস ও আতশবাজি এবং শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী মাইক, সাউন্ডবক্স বা এমন কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। দ্বীপে ও দ্বীপে চলাচলকারী সব জলযানে পলিথিন, চিপস এবং প্লাস্টিক বোতলে পানি ও পলিথিনে মোড়ানো যে কোনো ধরনের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। শব্দদূষণ রোধে দ্বীপে মোটরসাইকেল, ভটভটি, নসিমন, করিমন এবং ব্যাটারিচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করে ম্যানুয়াল যানবাহন- রিকশাভ্যান ও সাইকেল ব্যবহার করতে হবে। এসব যানকে নির্ধারিত সড়কে চলাচল করতে হবে। বিচে কোনোভাবেই নিষিদ্ধ ঘোষিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ওই ইউনিয়ন পরিষদ এ বিষয় নিশ্চিত করবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দ্বীপ এলাকায় কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবালসহ বিরল প্রজাতি রক্ষায় সরকার উদ্যোগী রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের চাপ বেশি হওয়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর নানা বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি নীতিমালা অথবা গাইডলাইন করা গেলে এই দ্বীপ ভারসাম্য ফিরে পাবে।

এদিকে গত ২৩ জুন ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং টেকসই পর্যটন নীতিমালা ২০২২’ পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে সুরক্ষার জন্য সব প্রকার ক্ষতিকারক কার্যক্রম বন্ধ ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। তিনি বলেন, দ্বীপের পর্যটকের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমাতে হবে। পরিবেশবান্ধব পর্যটন ও দ্বীপের উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে একটি কার্যকর নির্দেশিকা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিডি প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

রামুতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন

কক্সবাজারের রামুতে আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা ‘ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ’ এর শিক্ষা প্রকল্পের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ও প্রকল্প সমন্বয়কারির ...

উখিয়ায় বনবিভাগের পাহাড় কেটে তৈরি করছে বসতভিটা

কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের ওয়ালাপালং বিটে রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তরপুকুরিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় বনবিভাগের সহযোগিতায় ...